সাবেক একজন কারা কর্মকর্তা জানান, কারাগারে ফার্সির দণ্ড কার্যকর করতে আধা ঘণ্টার সময় সময় লাগে। তবে এর মধ্যে আনুষ্ঠানিকতা শেষে মূল মঞ্চে সময় লাগে ১৫ থেকে ১৭ মিনিট। এই কারা কর্মকর্তা দীর্ঘ দিন ছিলেন ঢাকা কারাগারে কর্মরত। তিনি জানান, ফার্সির মঞ্চের কাছে (৫০ গজের মধ্যে) কনডেম সেল (আটসেল)। এখানে রয়েছেন মানবতা বিরোধী অপরাধে দণ্ডিত মুহাম্মদ কামারুজ্জামান।
ফাঁসি কার্যকর করার ব্যাপারে তিনি অভিজ্ঞতা আলোকে বলেন, কনডেম সেল থেকেই ফাঁসির মঞ্চে দণ্ডিতকে নিয়ে আসবেন। তবে এর আগে কনডেম সেলে গোসল ও নামাজ পড়ে নিবেন দণ্ডিত ব্যক্তি। পড়ানো হবে কালেমা। এ কাজটি করবেন কারা ইমাম। এরপর জল্লাদ দণ্ডিতের দু’হাত পেছনে দিকে বেঁধে ফেলবেন, পড়াবেন কালো রঙের জমটুপি। জল্লাদরা তাকে ধরে নিয়ে যাবেন ফাঁসির মঞ্চে। সিঁড়ির পাঁচটি ধাপ পেরিয়ে মঞ্চে উঠানো হবে। মঞ্চে ওঠানোর পর যে গর্তটি কাঠের পাটাতন দিয়ে ঢাকা থাকে সেখানে দাঁড় করানো হয় দণ্ডিতকে। এরপর দু’পা সাদা কাপড় দিয়ে বাঁধা হয়। এ কাজগুলো সম্পন্ন করার মধ্যেই ফাঁসির লিভারের (হাতল) কাছে অবস্থান নেয়া জল্লাদ প্রস্তুত হয়। জল্লাদরা ফাঁসির দড়ি পরিয়ে দেয় দণ্ডিতের গলায়।
ফাঁসির মঞ্চের কাছে রাখা টেবিল সামনে রেখে মঞ্চমুখ করে চেয়ারে বসবেন সিভিল সার্জন, ঢাকা জেলা প্রশাসক, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার, আইজি প্রিজন্স, জেল সুপার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের একজন প্রতিনিধি এবং কারা হাসপাতালের চিকিত্সক। থাকবে ৯ জন সশস্ত্র কারারক্ষী। জেল সুপারের হাতে থাকে লাল রুমাল। ঐ রুমাল নামিয়ে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে গিয়ারে টান দেয়া হয়। সরে যায় গর্তের কাঠ। তখনি ফাঁসির রজ্জুতে গর্তের ভিতরে ঝুলতে থাকেন দণ্ডিত। মৃত্যু নিশ্চিত করতে ১৫/১৬ মিনিট ঝুলিয়ে রাখা হবে। পরে মরদেহ আবার গর্ত থেকে টেনে মঞ্চে ওঠানো হয়। তারপর দড়ি খুলে মরদেহ রাখা হয় সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের সামনে রাখা টেবিলে। তারা দেখার পর লাশ নেয়া হয় পাশের মর্গে। সেখানে লাশের স্পাইনাল কর্ড ও হাত-পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়।
তারপর ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এভাবে আধা ঘণ্টায় শেষ হয় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা। ফাঁসিতে দড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হয় ম্যানিলা রোপ। আর জল্লাদ ঠিক করা হয় কয়েদিদের মধ্য থেকেই।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন